গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা-গরুর মাংস বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়

দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনবাংলাদেশে গরুর মাংস অনেক বেশি জনপ্রিয়। গরুর মাংস পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া অনেক কঠিন। আমরা অনেকেই আজ জানিনা গরুর মাংস আমাদের শরীরের কি কি উপকার ও অপকার করে। গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের নিচের এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন। এখানে আমারা গরুর মাংস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
গরুর মাংস খাওয়া উচিৎ নিয়ম অনুযায়ী। বেশি খেলে এটি শরীরের অনেক বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। গরুর মাংস বেশি খেলে কি কি ক্ষতি হয় সেটিও আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। আপনারা চাইলে সেটিও পরে আসতে পাড়েন।

ভূমিকা: 

পৃথিবীতে গরুর মাংস মানুষের পছন্দের খাবারের তালিকাতে সকলের প্রথমে থাকে। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি হলেও আমরা গরুর মাংস অনেক বেশি পছন্দ করি। গরুর মাংসে রয়েছে অনেক ধরণের ভিটামিন যেটি আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি পূরণে সাহায্য করে । আমাদের মধ্যে অনেকের শরীরেই বিভিন্ন ধরনের রোগ রয়েছে।

যে কারণে আমরা অনেকেই মনে করি গরুর মাংস খেলে হয়তো আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হবে। তাই আমরা অনেকেই গরুর মাংস খেতে অনেক ভয় করি। নিচে আপনারা গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা-গরুর মাংস বেশি খেলে কি ক্ষতি হয় সেটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার অনেক খাবার রয়েছে সেগুলোর মধ্যে গরুর মাংস অন্যতম। গরুর মাংসে ভিটামিন সি,ফসফরাস,প্রোটিন,ভিটামিন বি ইত্যাদি রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি করে। গরুর মাংসে অনেক ধরনের প্রোটিন রয়েছে যেগুলো শরীরের বিভিন্ন দুর্বলতাকে দূরে ঠেলে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের নিয়মিত গরুর মাংস খাওয়া উচিত। যাদের শরীর দুর্বল এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তারা এ সমস্যাগুলু থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত গরুর মাংস খেতে পাড়েন।
  • শরীরে প্রোটিনের অভাব দূর করে : ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রায় ২২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। গরুর মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। গরুর মাংস আমাদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখে। গরুর মাংসের প্রোটিনের মাঝে অনেক এনজাইম থাকে যেগুলো আমাদের শরীরের হাড় এবং মাংসপেশি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও গরুর মগজ,পা,কলিজাতে অনেক ভিটামিন ও প্রোটিন থাকে যেগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। মানুষের শরীরে প্রোটিনের অভাব সবচেয়ে বেশি পূরণ করে গরুর মাংস। 
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে : চোখ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর মধ্যে একটি। গরুর মাংসে ভিটামিন এ এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা রয়েছে কাছের জিনিস ঘোলা দেখে আথবা দূরের জিনিস ঘোলা দেখে। তাদের এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত গরুর মাংস খাওয়া উচিত। গরুর মাংসের ভিটামিন ও প্রোটিন তাদের এসব দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
  • রক্তস্বল্পতা দূর করে : গরুর মাংসে রয়েছে ফসফরাস,প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম যেগুলো আমাদের শরীরের রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। আমাদের অনেকের শরীরেই প্রোটিনের অভাবে নিয়মিত রক্তস্বল্পতার দেখা দেই। মূলত রক্তস্বল্পতার মূল কারণ শরীরের প্রোটিন এবং পুষ্টিহীনতা। শরীরের পুষ্টিহীনতা দূর করতে নিয়মিত গরুর মাংস খাওয়া উচিত। কারণ গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। যেগুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত গরুর মাংস খায় তাদের শরীরে রক্তস্বল্পতার খুব একটা দেখা দেয় না। কারণ শরীরের রক্তস্বল্পতার ঘাটতিটা গরুর মাংস খেলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
  • শরীরের ক্লান্তি দূর করে : শরীরের ক্লান্তি এবং অবসাদের পরিমাণ অনেক বেশি হয় তখন। যখন মানুষ শরীরের উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করে। সকলের শরীরেই কান্তি এবং অবসাদ রয়েছে। এসব ক্লান্তি এবং অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের নিয়মিত গরুর মাংস খাওয়া উচিত। গরুর মাংসের বিভিন্ন প্রোটিন,ভিটামিন আমাদের শরীরের অবসাদ এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। গরুর মাংস তাই আমাদের সকলেরই খাওয়া উচিত শরীরের ক্লান্তি এবং অবসাদ দূর করার জন্য।

গরুর মাংস কেন খাওয়া উচিত

গরুর মাংস বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার। গরুর মাংসে ভিটামিন এ,ভিটামিন ডি,ভিটামিন সি,প্রোটিন,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,এনজাইম সহ প্রায় নয় ধরনের ভিটামিন জাতীয় উপাদান রয়েছে। এগুলো আমাদের দৃষ্টিশক্তি থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল সমস্যা থেকে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

আমাদের সকলের শরীরের প্রায় ৮০% প্রোটিনসহ ভিটামিনের যোগান দেয় গরুর মাংস। গরুর মাংস আমাদের সকলেরই নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রতিদিন খাওয়া উচিত। যাতে আমাদের শরীর সুস্থ এবং সবল থাকে। আমাদের সকলের গরুর মাংস এজন্যই খাওয়া উচিত যেন আমরা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি এবং ভিটামিনের অভাব গুলো খুব সহজেই পূরণ করতে পারি।

দিনে কতটুকু গরুর মাংস খাওয়া উচিত

আমরা সকলেই গরুর মাংস খেতে অনেকটা পছন্দ করি। তবে সেটি খাবারের পরিমাণ যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে সেটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি করে। একজন সুস্থ মানুষ দিনে ৮০ থেকে ৮৫ গ্রাম মাংস খেতে পারে। যদি কারোর এরকম আশঙ্কা থাকে যে সে এক দিনেই ৮০ থেকে ৮৫ গ্রামের বেশি মাংস খেয়ে ফেলবে। তাহলে তার সপ্তাহে দুই দিনের বেশি মাংস খাওয়া উচিত নয়।
শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত গরুর মাংস আমাদের খাবার তালিকায় রাখা উচিৎ। কারণ এগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি গুলো পূরণ করে। তবে সেটি বেশি নয় যতটুকু খেলে সুস্থ থাকা যাবে এবং শরীরের পুষ্টি পূরণ হবে ঠিক ততটুকুই খাওয়া উচিত। কেননা অতিরিক্ত মাংস যদি কেউ নিয়মিত খেতে থাকে তাহলে তার শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা জন্ম নিবে।

গরুর মাংস খাওয়ার অপকারিত

  • শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায় : যারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে গরুর মাংস খায় তাদের শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য দানা বাঁধে। তাই গরুর মাংস পরিমিত পরিমান খাওয়া উচিত। যাদের শরীরে যখন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। সেখান থেকে তাদের শরীরে আরো অনেক ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। তাই যখন কারো শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের সৃষ্টি হয় তখন গরুর মাংসের সাথে মানুষ শাক-সবজি মিশিয়ে খায়। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে। গরুর মাংস অনেক পুষ্টিকর খাবার তবে সেটি আমাদের পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে আমাদের শরীরের অনেক ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি হয় : গরুর মাংস অতিরিক্ত খাওয়া কখনো শরীরের জন্য উপকারী নয়। গরুর মাংস আমাদের খেতে হবে পরিমিত। চিকিৎসাবিজ্ঞান আমাদের বলে গরুর মাংস আমাদের খেতে হবে ৮০ থেকে ৮৫ গ্রাম নিয়মিত। যদি কেউ অনিয়মিত ভাবে গরুর মাংস সপ্তাহের প্রতিটা দিন খেতে থাকে। মূলত তাদের শরীরে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়ে। যারা চিকিৎসাবিজ্ঞানের এসব নিয়ম অনুযায়ী গরুর মাংস খায় না তাদের শরীরে অনেক ধরনের কঠিন রোগের জন্ম নেই। এছাড়াও গরুর লাল মাংস বেশকিছুদিন ধরে খাওয়াটা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে : গরুর মাংসে সোডিয়ামের পরিমাণ অত্যধিক থাকে। আর অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে প্রবেশ করালে শরীরে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সোডিয়াম শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা অনেকটা বৃদ্ধি পায়। যার ফলশ্রুতিতে শরীরে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো বড় ধরনের রোগের সঞ্চালন হয়ে। তাই হৃদরোগের চিকিৎসকেরা সবসময়ই মানুষকে গরুর মাংস কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের সব সময় গরুর মাংস এড়িয়ে চলা উচিত।

গরুর মাংস বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়

আমরা মূলত মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ আমাদের প্রধান খাবার হলেও গরুর মাংসও আমাদের অনেক প্রিয়। গরুর মাংস পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। খুব গুটিকয়েক মানুষজন যারা গরুর মাংস খান না। তাদের হয় শারীরিক কোন সমস্যা রয়েছে নয়তবা তারা গরুর মাংস পছন্দ করেননা। গরুর মাংস দিয়ে যেমন আমাদের শরীরে অনেক রকম উপকার রয়েছে।

তেমনি গরুর মাংস অতিরিক্ত খেলে আমাদের শরীরে এটির খারাপ প্রভাব ও পরে। যেমন অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে আমাদের শরীরের হৃদরোগের অনেক সমস্যা হয়,শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়,দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়,শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পায়,শরীরে বিভিন্ন রকম ক্লান্তি এবং অবসাদে আগ্রাসন করে। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের জটিল রোগ রয়েছে যেগুলো গরুর মাংস খাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। আমাদের সকলেরই উচিত গরুর মাংস খাওয়া তবে সেটি পরিমিত।

শেষ কথাঃ 

গরুর মাংস অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। আমাদের সকলেরই এটি খাওয়া উচিৎ। তবে সেটি পরিমিত ভাবে খাওয়া। আপনাদের যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে আমার ওয়েবসাইটি ঘুরে আসতে পাড়েন। আপনারা চাইলে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন

comment url