ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতাডিম অনেক শক্তিশালী একটি খাবার। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা শরীরের সকল
পুষ্টির অভাব পুরুন করতে সাহায্য করে। ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
সম্পর্কে আপনারা যদি বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে আমাদের নিচের এই আর্টিকেলটি পরে
আসতে পারেন। সেখানে আমরা আলোচনা করেছি ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়ে।
ডিম আমাদের সকলের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিনই থাকে। ডিম বেশি খেলে আমাদের অনেক কঠিন
রোগ হতে পারে। তাই ডিম খেতে হবে নিয়মের মধ্যে থেকে। কিভাবে ডিম খেলে শরীরের ক্ষতি
হবেনা আমারা নিচে সেটি নিয়েও আলোচনা করেছি।
ভূমিকা
ডিম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। ডিম আমাদের শরীরকে অনেক কঠিন
সময়ে সাহায্য করে। যেমন শরীর দুর্বল হলে আমরা ডিম খাই,প্রেসার বেড়ে গেলে ডিম
খাই,শরীরে শক্তি যোগাতে ডিম খাই। এছাড়াও ডিম শিশুদের মেধা তালিকা এবং দৈহিক
বিকাশে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। গবেষকেরা তাই বলে ভাজা ডিমের চেয়ে সিদ্ধ ডিমে
পুষ্টি অনেক বেশি থাকে। নিচে ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা
করা হলো।
ডিম আমাদের শরীরের কি কি উপকার করে
- দেহে শক্তি যোগায় : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শক্তির অনেক প্রয়োজন। কেননা যে কোন কাজ করার জন্য শক্তির প্রয়োজনই সবার আগে। ডিম আমাদের শরীরে খুব ভালোভাবে শক্তির যোগান দেয়। তাই চিকিৎসকরা আমাদের প্রতিদিন সকালে একটি করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। ডিম আমাদের শরীরে শক্তির যোগান দিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে : আমাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব প্রতিনিয়ত দেখা দেয়। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে। এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই যাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে তারা নিয়মিত ডিম খেতে পারেন।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে : ক্যান্সার একটি মরণবাধি রোগ। আজ পর্যন্ত ক্যান্সারের কোন প্রতিশোধক তৈরি হয়নি। যাদের ক্যান্সার একবার আক্রমণ করবে তাদের মরণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। ডিমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং লিউটিন জাতীয় একটি বিশেষ উপাদান যেটি শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই উপাদানটি আমাদের শরীরের নতুন কোষ তৈরিতে ও বিশেষ অবদান রাখে।
- হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে : ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যেগুলো আমাদের হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ডিম খেলে আমাদের হাড় অনেক ভালো থাকে। এছাড়াও যারা নিয়মিত ডিম খায় তারা হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পায়। ডিমে যে সকল ভিটামিন রয়েছে সেগুলো আমাদের হাড়কে শক্তিশালী এবং মজবুত করতে সাহায্য করে।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে : মানুষের বয়স দিন দিন যত বাড়তে থাকে তাদের চোখের সমস্যাও দিন দিন ততই বেড়ে যায়। এছাড়া বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কারণে মানুষের দৃষ্টি শক্তি অনেক তাড়াতাড়ি কমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার এটির গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হতে পারে। ডিমে যে সকল ভিটামিন রয়েছে এগুলো আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই যাদের দৃষ্টি শক্তি দিয়ে সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ডিম খেতে পারেন।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ : আমাদের সকলের শরীরেই কোলেস্টেরল রয়েছে। ডিম আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল গুলোকে ভালো কোলেস্টেরলের রূপান্তর করে। ফলে আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের সংখ্যা কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের সংখ্যা বেড়ে যায়। ডিম আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল এভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকভাবে বৃদ্ধি পায় তার মধ্যে ডিম একটি অন্যতম। ডিমে অনেক ধরনের ভিটামিন রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করে। ফলে আমরা অনেক সুস্থ থাকি। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তাই সকলেরই ডিম খাওয়া উচিত নিয়মিত।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিম অনেক পুষ্টিকরণ সম্পন্ন একটি খাবার। বাজারের বিভিন্ন স্থানে
দেখা যায় কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করতে। কোয়েল পাখির ডিম অনেক ছোট হতে পারে
কিন্তু এটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। ডিম অনেক ধরনের হতে পারে সেগুলোর মধ্যে
কোয়েল পাখির ডিমও একটি। কোয়েল পাখির ডিমের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ খালি পেটে ডাব খেলে কি হয়
যেগুলোর মধ্যে এটি আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়,রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে,শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মুরগির ডিমের উপকারিতা
মুরগির ডিমেও অনেক পুষ্টি রয়েছে। মুরগির ডিম আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। মূলত
সকল ডিমে ভিটামিন একই রয়েছে। মুরগির ডিম খেলে আমাদের শরীরে যে সকল উপকার হয়
সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। মুরগির ডিম আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য
করে,আমাদের হারকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে,শরীরের ওজন কমাতেও অনেক কার্যকরী ডিম।
উপরের আলোচনা গুলিতে আমরা ডিমের যে সকল উপকারিতার কথা বলেছিলাম সেগুলোও মুরগির
ডিমের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।
হাসের ডিমের উপকারিতা
যারা গ্রামে বাস করে তাদের প্রায় সকলের বাড়িতেই হাঁস রয়েছে। উপরে যতগুলো ডিমের
কথা আলোচনা করা হলো সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি সম্পন্ন ডিম হলো হাঁসের
ডিম। হাঁসের ডিমে মুরগির ডিমের তুলনায় কালোরি,কালসিয়াম,ফাট,লোহা,প্রোটিন অনেক
বেশি থাকে। দেখতে গেলে হাঁসের ডিমের এবং মুরগির ডিমের উপকারিতা একই।
উপরে যে সকল উপকারিতা গুলো মুরগির ডিমে বলা হয়েছে সে সকল উপাদান গুলো হাসের
ডিমেও রয়েছে।
কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা ডিমে ভিটামিন ই,ভিটামিন বি,খনিজ,আন্টি অক্সিডেন্ট অনেক বেশি পরিমাণ থাকে
সিদ্ধ ডিমের তুলনায়। একথা না মানার উপায় নেই যে সেদ্ধ ডিমের তুলনায় কাঁচা ডিমে
ভিটামিনের পরিমাণ একটু বেশি থাকে। কারণ ডিম রান্না করার পরে সেখানে ভিটামিনের
পরিমাণ অনেক নষ্ট হয়ে যায়। তবে যাদের শরীরে প্রোটিনের অনেক প্রয়োজন তাদের
সেদ্ধ ডিম খাওয়ায় ভালো।
কারণ কাঁচা ডিমে ৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে আর সেদ্ধ ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
এছাড়া অন্যান্য ডিমের উপাদানগুলো সেদ্ধ ডিমের তুলনায় কাঁচা ডিমে বেশি থাকে।
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা
বিভিন্ন গবেষণা দেখা গেছে ডিম ভেজে এবং কাঁচা খাওয়ার চেয়ে সিদ্ধ করে খাওয়াতে
ভিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি। ডিম সিদ্ধ করে খেলে প্রোটিন বেশি পাওয়া যায়। চুল
পড়া দূর হয়,শরীর অনেকটা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা
থেকে মুক্তি পেতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সিদ্ধ ডিম।
ডিমের উপকারিতা অনেক। আপনি এমনি ডিম খেলে যে সকল উপাদান পাবেন সিদ্ধ ডিম খেলেও
ঠিক সেই সকল উপাদানগুলিই পাবেন। আমাদের নিয়মিত ডিম খওয়া উচিত আমাদের শরীরের
বিভিন্ন রকম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে।
ডিম খাওয়ার অপকারিতা
প্রত্যেকটা জিনিসের খারাপ দিক এবং ভালো দিক দুটি রয়েছে। তেমনি ডিম খাওয়ার
উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটোই রয়েছে। ডিম অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে শরীরে অনেক ক্ষতি
হতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত অতিরিক্ত ডিম খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের ওজন
বেড়ে যাবে। আপনার শরীরের কোলেস্টেরের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন হৃদরোগে
আক্রান্ত হবেন।
আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে,এছাড়া যে সকল মানুষদের ডায়াবেটিস
রয়েছে তাদের জন্য ডিমের কুসুম অনেক ক্ষতিকর। তুলনামূলকভাবে ডিমের অপকারের চেয়ে
উপকারের সংখ্যায় অনেক বেশি। যদি কেউ নিয়ম মাফিক ডিম খেতে পারে তাহলে তার শরীরে
অপকারের চেয়ে উপকারের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। আমাদের সকলেরই ডিম নিয়ম মাফিক
খাওয়া উচিত।
একদিনে কতটুকু ডিম আমাদের খাওয়া উচিত
ডিম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং
অপকারিতা রয়েছে ডিমে। আমাদের ডিম নিয়মিত খাওয়া উচিত তবে এটি নিয়ম মাফিক
খাওয়া উচিত। কারণ অতিরিক্ত ডিম খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম খারাপ সমস্যা
দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে
পারবেন।
কারণ একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৩০০ গ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারবে।
তবে মধ্যবয়স্ক পার হওয়ার পর থেকে দিনে তিনটি করে ডিম খাওয়া কথা বিশেষজ্ঞরা
বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন।
শেষ কথা
ডিম আমরা সকলেই খেতে অনেক পছন্দ করি। ডিম আমাদের বেশি খেলে অনেক ক্ষতি হয়। বিশেষ
করে ডিমের কুসুম শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই আমরা সকলেই ডিমের কুসুম খাওয়া
থেকে বিরত থাকব। আর আপনাদের যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন
comment url