শসা খাওয়ার উপকারিতা-শসার খোসাতে যে যে উপকার রয়েছে
বেল খেলে কি ডায়বেটিস বাড়েশসা পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অনেক দুর্লভ। আমাদের দেশে শসা অনেক
জনপ্রিয় একটি ফসল ও সবজি। শসা শরীরের পানি শূন্যতা দূর থেকে শুরু করে,রক্তের
কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানো পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। আপনারা যারা শসা খাওয়ার
উপকারিতা এবং শসার খোসাতে যে যে উপকার রয়েছে তা সম্পর্কে জানতে চান। তারা নিচের
এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
শুধু শসায় আমাদের অনেক উপকারি করে বিষয় এমনটি নয়। শসার খোসাও আমাদের শরীরের
জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। নিচের আলোচনায় আমরা শসার খোসা সম্পর্কেও
আলোচনা করেছি। নিচে এটি সম্পর্কেও জানুন।
ভূমিকা
আমরা মূলত শসাকে সালাদ এবং সবজি হিসেবে বেশি ব্যবহার করে থাকি। আমরা সকলেই জানি
শসাতে প্রায় ৯৬% পানি রয়েছে। শসাতে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে। যেগুলো আমাদের
শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমরা আমাদের নিচের এই আর্টিকেলটিতে
শসা খাওয়ার উপকারিতা এবং শসার খোসাতে যে যে উপকার হয় সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি।
শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা আমাদের শরীরে জন্য পুষ্টি জাতীয় একটি সবজি। শসা খাওয়ার অনেক উপকারিতা
রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা নিচে আলোচনা করলাম।
- মাড়ীর জন্য ভালো : শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে দাঁতের সুস্থ থাকাটাও জরুরি। আমাদের মুখের পিএইচ এবং অ্যাসিডের ভারসাম্য ঠিক থাকে শসা খেলে। নিয়মিত শসা খেলে মাড়ি এবং দাঁতের বিভিন্ন রকম রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- শরীরকে হাইড্রেট রাখে : শসাতে প্রায় ৯৬% পানি থাকে। যে পানি আমাদের শরীরের হাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে। সারাদিনে প্রায় আমাদের শরীরে অনেক পানির প্রয়োজন হয়। যেগুলো আমরা বিভিন্ন শাকসবজি এবং ফলমূল থেকে পেয়ে থাকি। শসাও তেমনি একটি ফল যার মাধ্যমে আমাদের শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর হয়।
- ওজন হ্রাসে সাহায্য করে : মানুষের শসা খাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে ওজন কমানো অন্যতম। শসাতে কোন প্রকার ফ্যাট না থাকায় বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত শসা খেতে বলে। শসাতে কালোরীর পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমানোর জন্য এটি বেশ কার্যকরী একটি সবজি।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে : শসাতে যথার্থ পরিমাণ পেকটিন রয়েছে। যেটি শসার ভেতর প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যায়। এটি এক প্রকার ফাইবার। যেটি আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
- টক্সিন বের করতে সাহায্য করে : আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম খারাপ টক্সিন রয়েছে। শসা খেলে যেগুলো আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যেমন শসা খেলে আমাদের নিয়মিত মলত্যাগের রুটিন অনেক সহজ হয়। ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম খারাপ টক্সিন গুলো এর মাধ্যমে বের হয়ে যায় আমাদের শরীর থেকে। শসায় পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি আমাদের শরীরের পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
শসার খোসাতে যে যে উপকার রয়েছে
শসা আমাদের শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে। শসা অনেক উপকারী একটি ফল আমাদের শরীরের
জন্য। শসার পাশাপাশি শসার খোসাও অনেক উপকারী। এটির যে সকল উপকার রয়েছে সেগুলো
নিচে তুলে ধরা হলো।
- বিভিন্ন পুষ্টিবিদরা তাদের মতামত এ বিষয়ে প্রকাশ করেছেন যে,খালি পেটে শসার খোসা খেলে পেট সংক্রান্ত যে সকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো থেকে মুক্তি মিলবে।
- নিয়মিত শশার খোসা খেলে নিজেকে অনেকটাই তরুণ মনে হয়। কেননা এটি আমাদের শরীরে বয়সের ছাপ ফেলতে দেয় না। ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- যারা ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন,শরীরে পানি কমতি দেখা দিচ্ছে। তারা শসার খোসা খেতে পারেন নিয়মিত। এটি ডিহাইড্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
- যাদের চোখ ফোলাফলা রয়েছে। তারা শসার খোসা খেতে পারেন। এটি চোখের চারপাশের ত্বকের হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের কতটুকু শসা খাওয়া উচিত
দিনে আমাদের কতটুকু শসা খাওয়া উচিত এটি সম্পর্কে আপনাদের সকলেরই জানার অনেক
আগ্রহ রয়েছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা বলে দিনে ২-৩ টি শসা আমরা অনায়াসে খেতে পারি।
দুই থেকে তিনটি শসা খেলে এতে শরীরের কোন প্রকার ক্ষতি হবে না। তবে যদি কেউ এর
চেয়ে বেশি খাওয়া শুরু করে নিয়মিত।
আরও পড়ুন ঃ হিটস্ট্রোক থেকে পরিত্রাণের উপায়
হলে তার অনেক ধরনের সমস্যায় পরার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই সুস্থ থাকতে হলে দিনে
২-৩ টি শসা খাওয়ায় যথেষ্ট। তাই আশা করা যায় উপরের এই নিয়মটি মেনে চললে আপনি
শসা খেয়ে সুস্থ থাকতে পারবেন।
শসা খাওয়ার অপকারিতা
আমরা অনেকেই শসা খেয়ে থাকি শরীরকে ফিট রাখার জন্য। শসার এখানে উপকারিতা থাকলেও
এটির অনেক ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। নিচে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- টক্সিন : যে কোন জিনিসই অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। শসাতে থাকে দুই ধরনের টক্সিন যেগুলো হল টেরাসাইক্লিক টাইটের পেনয়ডন ও কিউকারবিটাসিস। এই টক্সিনগুলো আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত শসা না খাওয়ায় ভালো। এতে করে আমাদের অনেক বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- হাইপারক্যালেমিয়া : আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক রয়েছে। যেগুলো শরীরের ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। তাই দেহে পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিলে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। আর শরীরের এই অভাব পূরণ করতে পারে শসা। বিভিন্ন গবেষণা দেখা গিয়েছে যে অতিরিক্ত শসা খেলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যায়। আর এই সমস্যাটির নাম হল হাইপারক্যালেমিয়া। যাদের এ সমস্যাটি হয় তাদের পেটব্যাথা,গ্যাস বেশি হওয়ার আশঙ্কা,কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই শসা পরিমিত খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- পেটের বিভিন্ন সমস্যা : শসা পেটের সমস্যার জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার। তবে জানলে অবাক হবেন অতিরিক্ত শসা খেলে এটি আবার শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে হতে পারে বদহজম,পেট ব্যাথা,পেট ফুলে ওঠার মতন একাধিক সমস্যা। তাই শসা পরিমিত খাওয়াটাই যথার্থ।
- অতিরিক্ত প্রস্রাব হতে পারে : শসায় রয়েছে কিউকারবিটিন যেটি প্রস্রাবের মাত্রা বাড়ায়। সে ক্ষেত্রে শসা খেলে প্রস্রাব অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত শসা খেলে শরীরে জলের অনেক অভাব দেখা দিতে পারে। তাই সকলেরই শসা পরিমিত খাওয়া উচিত।
শেষ কথা
শসা সকলেরই পছন্দের একটি সবজি। যেটি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক খেয়ে থাকি।
তবে খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন অতিরিক্ত খাওয়া না হয়। আমাদের উপরের পোস্টটি যদি
আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনার মন্তব্যটি
এবং এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার ও করতে পারেন।
আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন
comment url