নওগাঁর ফজলি আমের গুনোগান দেশজুড়ে-বাংলাদেশের কোন আমগুলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে
কাঁঠালকে কেন জাতীয় ফল বলা হয়আম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। সকলেই আম খেতে অনেক পছন্দ
করেন। আপনারা যারা নওগাঁর ফজলি আমের গুনোগান দেশজুড়ে-বাংলাদেশের কোন আমগুলো জিআই
পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তারা আমাদের নিচের
আর্টিকেলটি পরে আসতে পারেন।
আমরা এখানে নওগাঁর ফজলি আমের গুনোগান দেশজুড়ে-বাংলাদেশের কোন আমগুলো জিআই পণ্যের
স্বীকৃতি পেয়েছে সেটি ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের সেরা ১০টি আমের নাম সম্পর্কে আলোচনা
করেছি।
ভূমিকা
আমের চাষ আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেক বেশি হয়ে থাকে অন্যান্য অঞ্চলের
তুলনায়। সেজন্য তুলনামূলকভাবে উত্তর অঞ্চলের মানুষজন আম বেশি পছন্দ করেন।
রাজশাহী জেলার আম সারা বাংলাদেশ বিখ্যাত। আমরা নিচে নওগাঁর ফজলি আমের গুনোগান
দেশজুড়ে-বাংলাদেশের কোন আমগুলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে সেটি সহ আরও অনেক
বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনারা চাইলে আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে
পারেন।
আমের জন্য দেশের কোন অঞ্চলটি সেরা
আমাদের দেশের সকল অঞ্চলেই আমের চাষ লক্ষ্য করা যায়। আম আমাদের দেশের বহুল
জনপ্রিয় একটি ফল। আমাদের দেশের উত্তর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আমের চাষ হয়ে থাকে।
আরো ভালো করে বললে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগে বহুকাল যাবত আমের চাষ হয় আসছে। তবে
বর্তমান সময়ে নওগাঁ জেলাতে দেশের সবচেয়ে বেশি আমের উৎপাদন হয়ে থাকে।
বেশ কয়েক বছর যাবত নওগাঁ জেলাই আম উৎপাদনে দেশে সেরা। নওগাঁ জেলা ছাড়াও রাজশাহী
জেলা,চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা,বগুড়া জেলাতেও প্রচুর পরিমাণে আমের উৎপাদন হয়ে থাকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী জেলাতে অনেক প্রাচীনকাল থেকে আমের চাষ হয় আসছে। আম
উৎপাদনে এসব জেলা দেশের বিখ্যাত।
আরও পড়ুনঃ তাল খাওয়ার যেসব উপকারিতা রয়েছে
তবে বর্তমান সময়ে এসে আমের চাশ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃদ্ধি পেয়েছে
অনেকটা। কেননা অনেক শিক্ষার্থী এখন আমের বাগান করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার দিকে
বেশি মনোযোগী হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের আমের চাষ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে
শিক্ষার্থীদের অনেক ভূমিকা রয়েছে।
বর্তমান সময়ে নওগাঁ জেলার আম কেনার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ
আসে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আমের উৎপাদন হয় রাজশাহী বিভাগে। এজন্য এ বিভাগকে
বলা হয় আম চাষের রাজা।
নওগাঁর ফজলি আমের গুনোগান দেশজুড়ে
রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় জেলার নাম হলো নওগাঁ জেলা। এটি রাজশাহী শহর থেকে
প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তর দিকে অবস্থিত। শুরু থেকেই এ জেলাটি ধান চাষের জন্য
অনেক বিখ্যাত ছিল। তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আমের উৎপাদন হয় এই
জেলাতে। এজন্য এ জেলার আমের গুনগান দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মুখে শোনা
যায়।
বিশেষ করে নওগাঁ জেলার পশ্চিমাঞ্চলের যে সকল স্থান রয়েছে। সেগুলোতে অনেক বড় বড়
আম বাগান রয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে নওগাঁ জেলাতে আমের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি
পেয়েছে আগের তুলনায়। কেননা এখানকার আমের স্বাদ অন্যান্য জেলাগুলোর তুলনায় অনেক
ভালো। নওগাঁ জেলার ফজলি আম দেশের সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত।
নওগাঁ জেলায় এ আমটি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। এই আমটি অনেক সুস্বাদু এবং
মিষ্টান্ন সম্পন্ন। নওগাঁ জেলার আম কেনার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে
মানুষ আসে। আমের মৌসুমে এই জেলার আম কেনার জন্য বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন ক্রেতারা
এখানে আসেন। তবে সময়ের সাথে সাথে নওগাঁ জেলার আমের চাষ ব্যাপক হারে বেড়ে
যাচ্ছে।
এটি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে অনেকটা সচ্ছল করছে। নওগাঁ জেলায় আমের আবাদ বাড়ার
কারণে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগের সেরা ১০টি আমের নাম
এটি তো আমাদের সকলেরই জানা। যে রাজশাহী বিভাগেই দেশের সবচেয়ে বেশি আমের উৎপাদন
হয়ে থাকে। যার ফলে দেশের সকল অঞ্চলের মানুষজন এখানকার আম কেনার জন্য মুখিয়ে
থাকেন। নিচে রাজশাহী বিভাগের সেরা ১০ টি আমের নাম উল্লেখ করা হলো।
- ফজলি আম
- খিরসাপাত আম
- ল্যাংড়া আম
- গোপালভোগ আম
- আম্রপালি আম
- হাড়িভাঙ্গা আম
- গৌরমুখী আম
- কাঁচামিঠা আম
- আশ্বিনা আম
- লক্ষণভোগ আম
এসব আম ছাড়াও রাজশাহী বিভাগে আরো অনেক ধরনের আম রয়েছে। যেগুলো অনেক সুস্বাদু
এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। রাজশাহী বিভাগের আমের প্রশংসা দেশের সকল অঞ্চলের মানুষই
করে। আম চাষের জন্য বাংলাদেশের এ বরেন্দ্রভূমিটি খুবই উর্বর। যেটির কারণে দেশের
প্রায় ৬০ শতাংশ আমের উৎপাদন রাজশাহী বিভাগে হয়ে থাকে।
তাই যারা আম খেতে খুবই পছন্দ করেন। তাদের রাজশাহী বিভাগের আম খাওয়া উচিত।
খিরসাপাত আমের চাষ সবচেয়ে বেশি কোন জেলাতে হয়
খিরসাপাত আমের জন্মই রাজশাহী জেলাতে। তাই সবচেয়ে বেশি আমটির চাষাবাদ রাজশাহী
জেলাতেই হয়ে থাকে। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে এটির চাষ ব্যাপক হারে হয়ে
থাকে। রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে জনপ্রিয় আমগুলোর মধ্যে খিরসাপাত অন্যতম। আপনারা
যারা খিরসাপাত আম সম্পর্কে জানতে চান। এবং এই আমটি খেতে চান তাহলে তাদের রাজশাহী
শহরে আসতে হবে।
খিরসাপাত আমটির সবচেয়ে বেশি চাষ বা রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জেলাতে হয় আসছে। তবে
সময়ের পরিক্রমায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আমটির চাষাবাদ বর্তমান সময়ে হচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ আমটির রাজশাহী বিভাগেই হয়। যেটির ফলে খিরসাপাত আমের
চরণভূমি বলা হয় রাজশাহী বিভাগকে।
দিনে কয়টি আম খাওয়া শরীরের জন্য ভাল
সকলেরই আম অনেক পছন্দের। তবে অনেক বেশি আম খাওয়া সেটি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
বিশেষ করে যারা বার্ধক্য বয়সে গিয়েছেন তাদের আমি এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ তাদের
শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা লেগে থাকে। তারা যদি আম খেতেও চায়। তাহলে একটি আমের
কিছু অংশ খেতে পারে।
আর যারা প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছেন তারা সারাদিনে ১-২ একটা আম খেতে পারেন। তবে খেয়াল
রাখবেন অতিরিক্ত যে কোন কিছু আপনার শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। আম যেমন
আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে। তেমনি অতিরিক্ত আম খেলে শরীরে বড় ধরনের প্রভাব
পড়তে পারে।
আম খেলে কি শরীরের ওজন বাড়ে?
আম অনেক পুষ্টি এবং ভিটামিন সম্পন্ন একটি ফল। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন
এ,ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,প্রোটিন সহ আরো অনেক ভিটামিন জাতীয়
উপাদান রয়েছে। যেটির কারণে এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম উপকার করে থাকে। যদি
কেউ আম পরিমিতভাবে নিয়মিত খেতে পারে।
তাহলে তার শরীরের অনেক সমস্যা থেকে সে মুক্তি পেতে পারে। তবে যে কোন জিনিসই
অতিরিক্ত খেলে সেটির খারাপ প্রভাব শরীরে পরে। আমে প্রচুর পরিমাণে চিনি রয়েছে।
যার ফলে যদি কেউ নিয়মিত অতিরিক্ত ভাবে আম খেতে থাকে। তাহলে তার শরীরের রক্তে
কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে। রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেতে
পারে।
এছাড়াও আম বেশি খেলে আমাশয় হইতে পারে। আমে যেহেতু চিনি রয়েছে। তাই কেউ যদি
নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে আম খেতে থাকে। তাহলে তার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই
বৃদ্ধি পায়। তাই যতটুকু প্রয়োজন শরীরের জন্য আম ঠিক ততটুকুই খাওয়া উচিত। এতে
করে শরীর অনেক সুস্থ এবং সবল থাকে।
বাংলাদেশের কোন আমগুলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে
বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় ফলগুলোর মধ্যে আম প্রথম সারিতে রয়েছে। আম পছন্দ করে
না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। আম গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। বাংলাদেশের অনেক
জিআই পণ্যই রয়েছে যেগুলোর মধ্যে আম অন্যতম। বাংলাদেশের যে কয়েকটি জিআই পণ্য
রয়েছে তার মধ্যে আমের সংখ্যা খুব বেশি একটা নেই।
তবে যে কয়টি আমকে বাংলাদেশ সরকার জি আই পণ্যর স্বীকৃতি দিয়েছে। সে আমগুলো
আমাদের দেশের সবচেয়ে ভালো এবং পুষ্টি সম্পন্ন আম। নিচে বাংলাদেশ সরকার যে কয়টি
আমকে জিআই পণ্যর স্বীকৃতি দিয়েছে সেগুলো হলো।
- খিরসাপাত আম। এই আমটিকে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
- ফজলি আম। রাজশাহী জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই আমটিকে বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালে জিআই পন্য হিসেবে ঘোষণা করে।
- ল্যাংড়া আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত এই আমটিকে ৫ জুলাই ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
- আশ্বিনা আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেকটি বিখ্যাত আম এটিকেও ৫ জুলাই ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
শেষ কথা
আমারা আমাদের উপরের আলোচনায় নওগাঁর ফজলি আমের গুনোগান দেশজুড়ে-বাংলাদেশের কোন
আমগুলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং রাজশাহী বিভাগের সেরা ১০টি আমের নাম নিয়ে
আলোচনা করেছি। আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন। এবং আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন
আপনাদের মতামত।
আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন
comment url