পেয়ারা খাওয়ার ৮টি উপকারিতা-পেয়ারা পাতা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়

তালের শাসে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছেআমরা কম-বেশি সকলেই পেয়ারা খেতে পছন্দ করি। আমাদের দেশে কম-বেশি সকলের কাছে পেয়ারা অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। আপনারা যারা পেয়ারা খাওয়ার ৮টি উপকারিতা-পেয়ারা পাতা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তারা আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
আমরা সেখানে পেয়ারা খাওয়ার ৮টি উপকারিতা-পেয়ারা পাতা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় ছাড়াও গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে পাবেন যে ১০ টি উপকার এবং পেয়ারা বেশি খেলে যেসব ক্ষতি হয় সেটি সম্পর্কে আলোচনা করেছি

ভূমিকা

পেয়ারা অনেক পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ একটি ফল। আমাদের দেশে সারা বছর এ ফল পাওয়া যায়। আমাদের দেশের কৃষকরা বর্তমান সময়ে পেয়ারা চাষ অধিকহাড়ে বৃদ্ধি করে দিয়েছে। পেয়ারা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন। আমরা সেখানে পেয়ারা খাওয়ার ৮টি উপকারিতা-পেয়ারা পাতা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় সেটি সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

পেয়ারার সকল পুষ্টিগুণ

পেয়ারাতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি পেয়ারাতে ৪টি আপেলের সমান এবং ৪টি কমলালেবুর সমান পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই আমাদের সকলেরই নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া উচিত। এছাড়াও পেয়ারাতে ফাইবার,ভিটামিন বি,ভিটামিন এ,ভিটামিন বি২,পটাশিয়াম,প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। 
পেয়ারা আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। তবে পেয়ারাতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যার ফলে চিকিৎসকেরা ভিটামিন সি জাতীয় যাদের রোগ রয়েছে। তাদের বেশি বেশি পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দেন।

পেয়ারা খাওয়ার ৮টি উপকারিতা

  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ পেয়ারাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং লাইপোকেন জাতীয় একটি উপাদান পাওয়া যায়। যেটি ক্যান্সারের কোষ নিরাময়ে কাজ করে। পেয়ারা স্তনক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী একটি ফল।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পেয়ারাতে রয়েছে ভিটামিন সি,ভিটামিন ডি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ পটাশিয়াম শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তাই এটি আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। তারা এটি থেকে মুক্তি পেতে পেয়ারা খেতে পারেন।
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য পেয়ারার পাতা অনেক কার্যকরী। পেয়ারা ডায়াবেটিস রোগীদের মেলিটাসের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল হল পেয়ারা।
  • পিরিয়ডের ব্যথা কমায়ঃ পিরিয়ডের সময় অনেকের পেটে তীব্র ব্যথা হয়। তারা এটি থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ওষুধ খায়। এক্ষেত্রে তারা ওষুধ না খেয়ে পেয়ারার পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেলে। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
  • স্ট্রোকের সমস্যাঃ যাদের স্টোক জাতীয় সমস্যা রয়েছে। পেয়ারা খেলে তাদের এই সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। যেটি রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পেতে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়ঃ যাদের সর্দি-কাশি জাতীয় বিভিন্ন রকম সমস্যা রয়েছে। নিয়মিত পেয়ারা খেলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পেয়ারাতে ভিটামিন সি রয়েছে। যেটি সর্দি-কাশি ভালো করতে ভূমিকা রাখে।

পেয়ারা পাতা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়

পেয়ারা আমরা সারা বছরই হাতের নাগালে পাই। আমাদের আশেপাশের বাজারে খুব সহজেই পেয়ারা পাওয়া যায়। পেয়ারা অনেক পুষ্টি সম্পন্ন একটি ফল। যেটির অনেক ধরনের গুণ রয়েছে। তবে আপনারা অনেকেই জানেন না। যে পেয়ারার পাতাতেও অনেক ভিটামিন এবং রোগ থাকে মুক্তি পাওয়ার ওষুধ রয়েছে। আজ আমরা আপনাদের সেসব বিষয় জানাবো।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবেশি সকলের শরীরের রয়েছে। পেয়ারার পাতাতে রয়েছে ভিটামিন সি। যেটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • পেয়ারার পাতাতে রয়েছে পটাশিয়াম এবং ফাইবার। যেটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায় পেয়ারার পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • পেয়ারার পাতাতে ফ্যানোলিক রয়েছে। যেটি রক্তের হিমোগ্লোবিন নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে। গ্যাস অথবা পেট জ্বালাপোড়া করে। তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে পেয়ারার পাতা চিবিয়ে খেলে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • যারা অতিরিক্ত ওজন সমস্যা নিয়ে ভুগছেন। তারা যদি নিয়মিত সকালে খালি পেটে পেয়ারার পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। তাহলে খুব সহজেই পেটের চর্বি এবং আপনার ওজন কমাতে পারবেন। তাই যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাচ্ছেন। তারা নিয়মিত পেয়ারার পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেতে পারেন।
  • আমাদের সকলেরই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরী। পেয়ারার পাতাতে বিভিন্ন রকম ভিটামিন রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল গুলোকে নষ্ট করে এবং ভালো কোলেস্টেরল গুলোকে বাড়িয়ে দেয়।

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে পাবেন যে ১০ টি উপকার

গর্ভাবস্থায়ী নারীদের বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর ফল খাওয়া উচিত। নিশ্চয়ই একজন গর্ভবতী নারীর নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া উচিত। কেননা পেয়ারাতে অনেক ধরনের ভিটামিন রয়েছে। যেগুলো গর্ভবতী নারীদের শরীরে অনেক প্রয়োজন। নিচে পেয়ারা খেলে একজন গর্ভবতী নারী কি কি উপকার পেতে পারে। সেটি তুলে ধরা হলো।
  • একজন নারী গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পেয়ারা খেলে। তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পাবে।
  • পেয়ারাতে ভিটামিন সি,পলিফ্রেন্ডলস এবং ক্যারোটিনয়েড জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যেগুলো একজন গর্ভবতী নারীর শরীরের জীবাণু মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
  • পেয়ারাতে ফাইবার থাকায় এটি শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের অনেক ধরনের সমস্যার ঝুঁকি কমে।
  • পেয়ারাতে ভিটামিন এ রয়েছে। যেটি গর্ভবতী নারীর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং অন্ধত্ব জাতীয় যে সকল সমস্যা রয়েছে। সেটি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
  • গর্ভবতী নারীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে। পেয়ারাতে রয়েছে লাইপোকেন জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেটি ক্যান্সার মোকাবেলা করতে খুবই কার্যকরী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
  • পেয়ারাতে ফাইবার থাকায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী একটি ফল।
  • একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক। এর অর্থ রক্তস্বল্পতা দূর করতে পেয়ারা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। কেননা পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। যেটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
  • গর্ভবতী নারীদের শুরুর দিকে খাবারে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তারা চাইলেও সকল খাবার খেতে পারে না। বমিবমি ভাব হয়,মাথা ঘোরে ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের হজমে সমস্যা হয়। এটি থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া উচিত।
  • পেয়ারা রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যেটি মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় নারীদের কর্টিসলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যেটির অভাব পূরণ করতে তাদের পেয়ারা খাওয়া উচিত।
  • নিয়মিত পেয়ারা খেলে গর্ভবতী নারীদের। শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের সহায়তা করে। এছাড়াও এটিতে অনেক ধরনের ভিটামিন জাতীয় উপাদান রয়েছে। যেগুলো শিশুর স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

পেয়ারা বেশি খেলে যেসব ক্ষতি হয়

পেয়ারা অনেক পুষ্টি জাতীয় একটি ফল হলেও। এটি অতিরিক্ত খেলে শরীরের অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমাদের সকলের পেয়ারা খাওয়ার সময় সচেতন হওয়া উচিত। অতিরিক্ত সকল জিনিসই শরীরের জন্য অনেক খারাপ। তাই যেটাই হোক না কেন সেটি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে যে সকল ক্ষতি হয়। সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
  • বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের পেয়ারা খাওয়ার সময় সচেতন থাকা উচিত। পেয়ারাতে রয়েছে ফাইবার যেটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে। হজমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে চিনি রয়েছে। যার ফলে শরীরের অনেক খাবার হজমে সমস্যা হয়। যার ফলে পেটে গ্যাস জাতীয় সমস্যা সৃষ্টি হয়।
  • পেয়ারাতে ফসফরাস ও পটাশিয়াম থাকায়। এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া এবং আমাশয় জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • পেয়ারার পাতাতে অনেক ধরনের পুষ্টি রয়েছে। যদি পেয়ারার পাতা কেউ অতিরিক্ত পরিমাণে খায়। তাহলে তার কিডনি এবং মাথাব্যথা জানিত সমস্যা হতে পারে।
  • যারা ঠান্ডা জাতীয় সমস্যাতে ভুগছেন। তাদের পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা পেয়ারা অনেক ঠান্ডা জাতের একটি ফল। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ঠাণ্ডা জাতীয় সমস্যা হতে পারে।

শেষ কথা

আমরা আমাদের উপরের আলোচনায় পেয়ারা খাওয়ার ৮টি উপকারিতা-পেয়ারা পাতা খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় এবং গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে পাবেন যে ১০ টি উপকার সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন। এবং আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন

comment url