পাটকে কেন বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়-পাট কত প্রকার ও কি কি
ভোট্টা খাওয়ার উপকারিতা-ভোট্টা খেলে কি ওজন বাড়েপাটকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ সরকার পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় নামে
একটি আলাদা মন্ত্রণালয় তৈরি করে রেখেছেন। আপনারা যারা পাটকে কেন বাংলাদেশের
সোনালী আঁশ বলা হয়-পাট কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তারা
আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
আমরা সেখানে পাটকে কেন বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়-পাট কত প্রকার ও কি কি এর
পাশাপাশি পাটের শাক আমাদের শরীরের কি কি উপকার করে এবং পাট গাছ থেকে পাট বের করার
প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
ভূমিকা
পাট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রপ্তানিমূলক ফসলগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশ ছাড়াও
ভারত,নেপাল,ব্রাজিল,থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সহ আরও অনেক দেশে ব্যাপকহাড়ে পাঠের
চাষ হয়। আমাদের দেশে পাট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিস অনেক জনপ্রিয়। তবে আমাদের
দেশে পাটের সঠিক ব্যবহার করতে পারেনা বিশেষজ্ঞরা।
এক সময় যে পাট বাংলাদেশের অর্থনীতির ৫০% এর জগান দিত। সেই পাট আজকের সময়ে এসে
মানুষ আর চাষ করতে চায়না। সরকার দেশের সকল পাটকল আরও ৩ বছর আগে চিরদিনের জন্য
বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পাট দিয়ে এখন আমাদের অর্থনীতির উন্নতি আসা করা যায়না।
নিচের আলোচনায় পাটকে কেন বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়-পাট কত প্রকার ও কি কি
নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা পড়লে পাট সম্পর্কে আপনাদের জ্ঞান অনেকটা
বাড়বে।
পাটকে কেন বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়
আমাদের দেশে ধানের পরে সবচেয়ে বেশি আবাদি কৃষিপণ্য হলো পাট। এক সময় এমন ছিল
বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই তাদের জমিতে পাট চাষ করত। কেননা
আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বে সেরকম কোন ধানের বীজ ছিল না। যেটি লবণাক্ত পানিতে খুব
ভালো ফলন দেবে।
আরও পড়ুনঃ কমলাতে যে সকল পুষ্টিগুণ রয়েছে
তাই সেখানকার মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাদের জমিতে পাটের চাষ করতো। বাংলাদেশ
সরকার সে সময় সারা দেশে প্রায় অনেকগুলো পাটকল পরিচালনা করত। যেটির দ্বারা পাট
শিল্পের অনেক উন্নতি হয়েছিল। এবং সে সময়ে পাট বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিকারক
পণ্য হিসেবে বিবেচিত হত। তবে সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে দেশের প্রায় সব
পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
তাই বাংলাদেশের কৃষকগণ বাধ্য হয়ে পাটের চাষ বন্ধ করে দিয়েছে৷ পাটকে সোনালী আঁশ
বলার কারণ হলো। পাট যখন এক মাস জাগ দেওয়ার পরে ধোয়া হয়। এবং সেটি যখন রোদে
শোঁকানো হয়। তখন সেটি সোনালী আকার ধারণ করে। তাই মানুষজন এটিকে সোনালী আঁশ বলে
থাকে। তবে সোনালী আঁশ বলার আরেকটি মূল্যবান কারণ হলো।
পাট সে সময় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনেক উপরে তুলতে সাহায্য করেছিল। সে সময় পাট
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রপ্তানি কারক ফসলে পরিণত হয়েছিল। পাটকে কেন বাংলাদেশের
সোনালী আঁশ বলা হয়-পাট কত প্রকার ও কি কি সেটি আপনারা নিচের আলোচনায় জানতে
পারবেন।
পাট কত প্রকার ও কি কি
পাঠ সাধারণত দুই ধরনের। যথাঃ
- সাদা পাট
- তোষা পাট
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়ার পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে। পাটকে
৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
- হার্ডডিস্ট্রিক্ট পাটঃ এ জাতীয় পাটগুলো সাধারণত একটু কম সূক্ষ্ম হয় থাকে। তবে এ পাটের উজ্জ্বলতা এবং তৈলাক্ততা একই থাকে অন্যান্য পাটের মত। বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় এ পাটটি সবচেয়ে বেশি উৎপাদনে দেখা যায়।
- সফ্টডিস্ট্রিক্ট পাটঃ বৃহত্তর বরিশাল,খুলনা,কুষ্টিয়া,যশোর এই অঞ্চলে এ পাটের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই পাটটির তৈলাক্ততা এবং উজ্জ্বলতা অন্যান্য পাটের তুলনায় অনেক কম।
- ডিস্ট্রিক্ট পাটঃ বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলে এবং চলন বিলের আশেপাশের জায়গাগুলোতে এ পাটটি সবচেয়ে বেশি জন্মে। এছাড়াও নোয়াখালী,সিলেট সহ বাংলাদেশের আরো পার্বত্য অঞ্চলে এ পাটের চাষাবাদ দেখা যায়। এ পাটের আঁশ কিছুটা মোটা,উজ্জ্বলতা এবং তৈলাক্ততা অন্যান্য পাটের তুলনায় কম।
- জাত পাটঃ বৃহত্তর কুমিল্লা,ঢাকা,ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল এ অঞ্চলটিতে জাত পাটের বেশি উৎপাদন লক্ষ্য করা যায়। এ জাতের পাঠ অনেকটাই মোটা সম্পন্ন এবং কম উজ্জ্বল ও তৈলাক্ততা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
- নর্দান পাটঃ বৃহত্তর রাজশাহী,বগুড়া,রংপুর,দিনাজপুর যে সকল পাট হয়। সেগুলোকে নর্দান পাট বলা হয়ে থাকে। এ দিকের পাটের আঁশও অনেকটা মোটা উজ্জ্বলতা ও তৈলাক্ততা কম।
পাটের শাক আমাদের শরীরের কি কি উপকার করে
পাটকে কেন বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়-পাট কত প্রকার ও কি কি জানতে হলে আরও
পড়ুন। বাঙালিরা বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে যেসব মানুষ বসবাস করে। তারা শাকের উপর
অনেক বেশি নির্ভরশীল। কেননা গ্রাম অঞ্চলে অনেক আবাদি জমে রয়েছে। যেগুলোতে কৃষকগণ
শাকসবজি চাষ করে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় জমির পাশে অনেক শাকসবজি এমনিতেই হয়েছে। যেটির কারণে
শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ বেশি শাকসবজি খেয়ে থাকে। বাংলাদেশ ছয় ঋতু সম্পূর্ণ
একটি দেশ। আমাদের দেশে বিভিন্ন ঋতুতে আলাদা আলাদা শাকসবজি পাওয়া যায়। তবে পাটের
সময়ে সকলের কাছে পাটের শাক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কেননা এ শাকে অনেক ভিটামিন রয়েছে। বিভিন্ন চিকিৎসকগণ পরামর্শ দেন যাদের বিভিন্ন
রকম হার্টের সমস্যা,ডায়াবেটিস,গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের বিশেষ করে পাটের শাক
বেশি খেতে হবে। পাটের শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি সবজি।
পাট গাছ থেকে পাট বের করার প্রক্রিয়া
পাট গ্রীষ্মকালীন একটি ফসল। বর্তমান সময়ে পাটের চাহিদা অনেক বেশি। সেজন্য আবারো
কৃষকগণ পাট চাষের দিকে বেশি ঝুকিয়ে পড়ছে। পাট পরিপক্ব হইতে প্রায় ৪ মাস সময়
লেগে থাকে। যখন পাট পরিপক্ক হয়ে যায়। তখন সেটি কেটে ছোট ছোট বোঝা বেধে।
আশেপাশের কোন পুকুর,নদী অথবা ছোটখাটো ডোবাতে প্রায় ১ মাসের জন্য জাগ দিতে
হয়।
জাগটি এমনভাবে দিতে হয় যেন পাটের সকল বোঝা পানির নিচে থাকে। এভাবে এই জাগিটিকে ১
মাস যাবত রাখতে হয়। কিছুদিন পর পর গিয়ে লক্ষ্য করতে হয়। যে পাট কি ধীরে ধীরে
পরিপক্ক হচ্ছে কিনা। আর যখন পরিপক্ক হয়ে যায়। তখন সেটিকে বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা
আলাদা ভাবে ডাটি থেকে খুলে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ হিটস্ট্রোক থেকে পরিত্রাণের উপায়
কোথাও হাতল জাতীয় কোন বস্তু দিয়ে বাড়িয়ে আবার কোথাও হাত দিয়ে টেনে বের করে
নেওয়া হয় পাটকে। তারপর পাটগুলোকে শুকাতে দেওয়া হয়। যখন পাটগুলো ভালোভাবে
শুকানো হয়। তারপর সেটিকে বাজারজাত করা হয়। আর এভাবেই পাট গাছ থেকে পাট বের করা
হয়।
পাট গাছ থেকে কি কি জ্বালানি পাওয়া যায়
পাটগাছ থেকে অনেক ধরনের জ্বালানি বের হয়। যেমন যখন পাট লাগানো হয়। তার কিছুদিন
পরে পাটের গাছ অনেক বেশি হওয়ার কারণে সেখান থেকে অনেক গাছ তুলে ফেলে দিতে হয়।
যেগুলো আমরা ফেলে না দিয়ে শাক হিসেবে খেয়ে থাকি। এছাড়া যখন পাট গাছ পরিপক্ক
হয়ে যায়। তখন পাটের অনেক এমন গাছ রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন ধরনের রোগজনিত কারণে
মরে যায়।
যেগুলো পরে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পাট যখন জাগে
দেওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে আমরা স্থানীয় ভাষায় যেটাকে সিনট বলে থাকি সেটি
পাওয়া যায়। যেটি অনেক ভালো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় আমাদের গ্রামীণ
সমাজে।
এছাড়াও পাটের অনেক আবর্জনা রয়েছে যেগুলো জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই বলা
যায় পাট থেকে আমরা অনেক ধরনের জ্বালানি পাই। যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন কাজে
নিয়মিত ব্যবহার হয়ে আসছে।
শেষ কথা
আমরা আমাদের উপরের আলোচনায় উল্লেখ করেছি পাটকে কেন বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা
হয়-পাট কত প্রকার ও কি কি এবং পাটের শাক আমাদের শরীরের কি কি উপকার করে। আপনাদের
যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার
করুন। এবং আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত।
আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন
comment url