বিজয় দিবসে অস্থায়ী সরকারের অবদান-মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে কয়টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল

সকালে খালিপেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতাসকলেই কম বেশি স্বাধীনভাবে থাকার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের কাছে থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিল। আপনারা যারা বিজয় দিবসে অস্থায়ী সরকারের অবদান-মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে কয়টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তারা আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
আমরা সেখানে বিজয় দিবসে অস্থায়ী সরকারের অবদান-মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে কয়টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল এটি ছাড়াও বিজয় দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং বিজয় দিবসে শহীদদের অবদান নিয়ে আলোচনা করেছি।

ভূমিকা

বহুকাল থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের উপনিবেশিক হয়ে আসছে। দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের উপনিবেশিক থাকার পরে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হওয়ার এই যাত্রাটি খুব সহজ ছিল না। 
বাংলাদেশ তেমনি স্বাধীন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেছিল। প্রায় ৮ লাখ শহীদের বিনিময়ে বাংলায় স্বাধীনতা এসেছিল। প্রত্যেক বছর আমরা এই দিনগুলোতে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের স্মরণ করি। 
আপনারা যারা বিজয় দিবসে শহীদদের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তারা আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।

বিজয় দিবস কত তারিখে অনুষ্ঠিত হয়

বাংলাদেশ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কবল থেকে যেদিন মুক্তি পেয়েছিল। সেদিনকেই বলা হয় বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এ দিবসের গুরুত্ব বাঙ্গালীদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দেশের সকল অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রায় সাত লক্ষ নিরীহ মানুষদের হত্যা করে। 
বাঙালিরা তৎকালীন প্রভাবশালী পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে দেয়। এ যুদ্ধে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষের অংশগ্রহণ করেছিল। দেশের স্বাধীনতায় লক্ষ লক্ষ শহীদগণ তাদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। শেষ মুহূর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীদের বাংলাদেশ হারাতে সক্ষম হয়। 
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ৯৪ হাজার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ে স্যালেন্ডার করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান। যার ফলে সেদিন থেকেই বাংলাদেশ একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এজন্যই ১৬ই ডিসেম্বর কে বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে স্মরণ করা হয় যারা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন সে সকল মানুষদের।

বিজয় দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বাংলাদেশ পূর্বে প্রায় ২০০ বছর ইংরেজদের দ্বারা শাসন এবং শোষণ হয়েছিল। তারপর যখন ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান ভাগ এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই পাকিস্তান পূর্ব বাংলার উপর যতভাবে সম্ভব সকল উপায়ে পূর্ব বাংলার মানুষ জনকে শোষণ করেছে।
 পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশকে দীর্ঘ ২৩ বছর শোষণ করার পরে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তান পূর্ব বাংলাতে যখন শাসন এবং শোষণ করেছে। প্রত্যেকবার বাঙালিরা সেটির সঠিক জবাব দিয়েছে বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে। 
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যেটি সবচেয়ে বড় প্রমাণ। একটি জাতি তাদের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গঠন করার জন্য। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে গণজাগরণের সৃষ্টি করে। যার ফলে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। এরপর ১৯৫৪ সালে যখন নির্বাচন হয় সেটিতে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভ করলেও তাদের ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হয়নি। 
এরপরে ১৯৬৮ সালে সামরিক শাসন দূর করার জন্য যে আন্দোলন করা হয়। তারপর ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালীদের সকল প্রকার আন্দোলন অনেক জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। যেটি পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। তখন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার প্রাদেশিক নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। 
যেটিতে আওয়ামীলীগ ১৬৭ টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। তারপরেও আওআমী লীগকে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তারা বিভিন্ন রকম গুড়িমুশি করছিল। যার ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ জন পাকিস্তান সরকারের উপর আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারপরে তারা আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিভিন্ন বৈঠকে বসার আহবান জানায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করলেও তারা সেরকম কোন সিদ্ধান্ত জানাতে পারত না। যার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণে বাংলার মানুষজনদের মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে দেন। যার হাতে যা কিছু রয়েছে সেটি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেন মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য। 
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় দীর্ঘ নয় রক্তক্ষয় যুদ্ধের পর। ১৯৭১ সালেরই ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশ এর কাছে তাদের বাহিনী নিয়ে সারেন্ডার করে। যার ফলে এই দিনকে বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

বিজয় দিবসে অস্থায়ী সরকারের অবদান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সাল থেকেই। সে সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য কোন সংগঠন ছিল না। যার কারণে তৎকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছিল। জেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার হিসেবে পরিচিত। 
মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম বাগানে। এবং মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ হয়েছিল ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এছাড়াও এ সরকারের আরো কয়েকটি মন্ত্রী ছিল যারা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকার দেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করেছিল। এবং তারা ঠিক করে দিয়েছিল প্রত্যেকটি সেক্টরে কে কোন দায়িত্ব পালন করবে। 
এছাড়াও কোথায় কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে লাগাতে হবে। দেশকে কিভাবে পরিচালনা করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেটিতে সবচেয়ে ভালো অবদান রেখেছে মুজিবনগর সরকার।

বিজয় দিবসে শহীদদের অবদান

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ তাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সে সময় শিশু থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত কাউকে ছাড় দেয়নি। যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শহীদ হয়েছেন আমরা প্রত্যেক বছর ১৬ই ডিসেম্বর তাদের স্মরণ করে থাকি। 
যারা বাংলাদেশের স্বাধীন করতে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা কোনদিনও তাদের ঋণ শোধ করতে পারবো না। তবে আমরা চাইলেই তাদেরকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে পারি। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাতে বা বিজয়ে ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশ সরকার তাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহযোগিতা করছে। 
বিজয় দিবসে আমরা সকলেই জাতীয় স্মৃতিসৌধতে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র যতদিন থাকবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যাদের অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাদের ততদিন মনে রাখবে এবং শ্রদ্ধা করবে। যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদে জীবন উৎসর্গ করেছেন তারাই দেশের আসল হিরো।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে কয়টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য কোনরকম সংগঠনের উপস্থিতি ছিল না। যার ফলে তৎকালীন যারা বাংলাদেশের বড় ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ছিলেন তার একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সেটি গ্রহণ করা হয়ে গেলে। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কারণে। 
কোন একটি জায়গাতে অবস্থান করে অস্থায়ী সরকারের পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। সেজন্য বাংলাদেশকে ১১ টি আলাদা আলাদা সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। যাতে মুক্তিযুদ্ধ খুব ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়। কোনরকম সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হলে খুব সহজেই যেন তাদের সাহায্য করা যায়। 
সেজন্য এটি খুবই কার্যকর একটি সিদ্ধান্ত ছিল মুজিবনগর সরকার কর্তৃক। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। সবগুলো সেক্টরকে আলাদা আলাদা ভাগ করার কারণে যেটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা অর্জন করতে ভূমিকা রেখেছিল।

শেষ কথা

আমরা আমাদের উপরের আলোচনায় বিজয় দিবসে অস্থায়ী সরকারের অবদান-মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে কয়টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল এবং বিজয় দিবসে শহীদদের অবদান ও বিজয় দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন। এবং আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন

comment url