বাঙালির নববর্ষে পান্তা ইলিশ-পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা
আখের রস খাওয়ার ১০টি উপকারিতাবাঙ্গালীদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ। প্রত্যেক
বছর খুব ঘটা করে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশে এই উৎসবটি পালন করা হয়। আপনারা
যারা বাঙালির নববর্ষে পান্তা ইলিশ-পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে চান। তারা আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
আমরা সেখানে বাঙালির নববর্ষে পান্তা ইলিশ-পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা
ছাড়াও নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পহেলা বৈশাখে বাঙালির পিঠা উৎসব নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকা
নববর্ষ মূলত পালন করা হয় বাংলা বছরের শুরুর দিনে। যেটি বাঙ্গালীদের সংস্কৃতির
সবচেয়ে বড় একটি উৎসব। যেটির দ্বারা বাঙ্গালীদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য পৃথিবীর
মাঝে তুলে ধরা হয়। প্রত্যেক বছর এই দিনটিতে বাঙালিরা বিভিন্ন রকম কার্যক্রম পালন
করে থাকে। যেগুলো সম্পর্কে নিচে আরো ভালোভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা চাইলে
সেটি পড়ে আসতে পারেন।
বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে কিছু কথা
সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকে বাংলা সন গণনা চালু হয়েছিল। ঠিক তখন থেকেই প্রত্যেক
বছর বাঙালিরা বাংলা বছরের প্রথম দিন কে নববর্ষ হিসেবে পালন করে আসছে। ঠিক সে সময়
কাল থেকেই নববর্ষের বিভিন্ন রকম কারুকার্য এবং সংস্কৃতির উৎসব হয়ে আসছে। বাংলা
বছর ১২ মাসে সম্পন্ন হয়। সময়ের সাথে সাথে বাঙ্গালীদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে
পহেলা বৈশাখ।
যেহেতু বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখ সেজন্য বৈশাখ মাসের প্রথম দিনকে পহেলা
বৈশাখের হিসেবেই গ্রাম বাংলার মানুষজন বেশি অভিহিত করে থাকে। এদিনে পান্তা ইলিশ
খাওয়ার প্রচলন রয়েছে বাঙালিদের মাঝে। বিভিন্ন রকম পিটা উৎসব মেলা এবং সাজগোজ
করাই বাঙ্গালীদের পহেলা বৈশাখের প্রধান উৎসব।
আরও পড়ুনঃ আমলকিতে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়
মূলত পহেলা বৈশাখ পালন করাকে কেন্দ্র করেই ১৯৪৮ সালের দিকে পাকিস্তান সরকারের
সাথে পুরো বাংলার মানুষজনদের আন্দোলনের শুরু হয়। যার ফলে তারা বাংলা ভাষাকে
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে না দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। যার ফলে ১৯৫২ সালে ভাষা
আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছিল। এবং তারপরে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
সময়ের সাথে সাথে বাঙ্গালীদের প্রধান একটি উৎসবের পরিণত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। তাই
প্রত্যেক বছর বাংলা বর্ষের প্রথম তারিখে বাঙালিরা ঘটা করে তাদের নববর্ষ উৎসব পালন
করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। যেটি বাঙালির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সারক হিসেবে
কাজ করে।
বাঙালির নববর্ষে পান্তা-ইলিশ
বাঙালির যেন নববর্ষে পান্তা ইলিশ ছাড়া চলেই না। বাঙ্গালীদের নববর্ষ উৎসব হবে আর
সেখানে পান্তা ইলিশ থাকবে না এটি কোনভাবেই সম্ভব নয়। বাঙ্গালীদের কাছে নববর্ষ
উৎসব মানেই পান্তা-ইলিস। বহুকাল ধরেই বাঙালিরা বাংলা বছরের প্রথম দিন কে নববর্ষ
বা পহেলা বৈশাখ উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে।
যেটির কারণে এটি সময়ের সাথে সাথে বাঙালি জাতির একটি আবশ্যিক সংস্কৃতিক উৎসবে
পরিণত হয়েছে। তাই প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসের প্রথম তারিখে বাঙালি জাতির এই
ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি সারা পৃথিবীব্যাপী ঘটা করে পালিত হয়। এ দিনে বাঙালিরা বিভিন্ন
রকম পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে পহেলা বৈশাখী মেলার
আয়োজন হয়ে থাকে।
এছাড়াও পাশাপাশি বাঙালিদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো পান্তা। পহেলা বৈশাখে
সকলেই চেষ্টা করে পান্তার সাথে ইলিশ মাছ খাওয়ার। এটি বহু কাল থেকে হয়ে আসার
কারণে বর্তমান সময়ে পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খেতেই হবে এটি একটি প্রথাতে পরিণত
হয়েছে। নববর্ষের পান্তা ইলিশ খাওয়া এটি বাঙালি জাতির কাছে এখন একটি উৎসব বটে।
বাংলা পঞ্জিকার ১২টি মাসের নাম
সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকে বাংলা সালের আবর্তন হয়েছে। ঠিক তখন থেকেই বাঙালিরা
এটি তাদের বার্ষিক পঞ্জিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে। বাংলা পঞ্জিকা তে ১২টি মাস
রয়েছে। এসব প্রত্যেকটি মাসের আলাদা আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেগুলোর নাম
নিচে উল্লেখ করা হলো।
- বৈশাখ মাস
- জৈষ্ঠ মাস
- আষাঢ় মাস
- শ্রাবণ মাস
- ভাদ্র মাস
- আশ্বিন মাস
- কার্তিক মাস
- অগ্রাহায়ন মাস
- পৌষ মাস
- মাঘ মাস
- ফাল্গুন মাস
- চৈত্র মাস
পহেলা বৈশাখে বাঙালির পিঠা উৎসব
শুরু থেকেই বাঙালিরা পিঠা পাগল একটি জাতি। তবে নববর্ষ এলে বাঙালিরা যেন বিভিন্ন
পিঠা উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। এ সময় তারা বিভিন্ন রকম
পিঠা,পায়েস,মিষ্টি,দই,রসগোল্লা সহ আরো অনেক ধরনের পিঠার আয়োজন করে থাকে। পিঠা
উৎসব এটিও বর্তমান সময়ে নববর্ষের একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে রূপান্তর
হয়েছে।
নববর্ষ পালন করলে এখন সেখানে পিঠা উৎসবের বিভিন্ন আয়োজন দেখা যায়। পিঠার সাথে
বাঙালিদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। নববর্ষের সময় বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের পিঠা
উৎসবের আয়োজন করা হয়। যেখানে বহু মানুষজন তাদের পিঠা বানিয়ে মানুষের কাছে
বিক্রি করে।
সময়ের সাথে সাথে এই উৎসবটিও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ
করে বিদেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে নববর্ষের দিনে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা
পহেলা বৈশাখ মানে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় মেলার আয়োজন। বিশেষ করে এসব মেলার
আয়োজন গুলো গ্রাম অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। নববর্ষকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক বছর
দেশের আনাচে-কানাচে অনেক ধরনের ছোট বড় মেলার আয়োজন হয়। যেটিতে বিভিন্ন ধরনের
খাবারের দোকান,ছোট বাচ্চাদের খেলাধুলার আসবাবপত্রের দোকান।
এসব ছাড়াও বিভিন্ন পিঠার দোকান,নববর্ষ জাতীয় বিভিন্ন পোশাকের দোকান, পান্তা-ইলিশ
খাওয়ার আলাদা আলাদা অনেক দোকান বসে। এছাড়াও এই মেলাগুলোতে আনন্দ করার মতো
নাগরদোলা পাওয়া যায়। যেগুলোতে প্রচুর বিনোদন হয়। সময়ের সাথে সাথে পহেলা
বৈশাখের এসব মেলাগুলোর সংখ্যা অনেকটাই কমে যাচ্ছে। তবে নববর্ষের একটি ঐতিহ্যবাহী
সংস্কৃতি হল বৈশাখী মেলা এটি সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।
নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা
বিশ শতাব্দীর শেষের দিকে এসে ঢাকাতে এই মঙ্গল শোভাযাত্রাটির যাত্রাটির প্রচলন
শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নববর্ষ কে কেন্দ্র
করে। একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে শোভাযাত্রাটি অনেক
বড় আকার ধারণ করেছে। বর্তমান সময়ে এ শোভাযাত্রাটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মঙ্গল
শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
মূলত এ শোভাযাত্রাটির মাধ্যমে বাঙালির বিভিন্ন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়
পৃথিবীর কাছে। বর্তমান সময়ে নববর্ষের অবিচ্ছেদ একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই
মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শেষ কথা
আমরা আমাদের উপরের আলোচনায় বাঙালির নববর্ষে পান্তা ইলিশ-পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য
বৈশাখী মেলা এবং পহেলা বৈশাখে বাঙালির পিঠা উৎসব সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনাদের
যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার
করুন। এবং আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত।
আপনাদের মন্তব্য কমেন্টেরে মাধ্যমে জানাতে পাড়েন
comment url